- গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশি উদ্ভাবকের বিদ্যুৎবিহীন এসি; এবারনিজেই আপনার বাসায় আপনি নিজেই এসি তৈরী করুন
কোমলপানীয় ও বোতলজাত পানির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে প্লাস্টিকের বোতল এখন সহজলভ্য। অনেকেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ফুলদানি কিংবা টব বানাচ্ছেন। কিন্তু কখনও ভেবেছেন এইপ্লাস্টিকের বোতল দিয়েই তৈরি করা সম্ভব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র? শুধু তাই নয়, এই এসিতে কোনও বিদ্যুৎ লাগবে না। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- খুব সহজেই এটা তৈরি করে ঘর শীতল রাখা যাবে। অসম্ভব মনে হলেও অভিনব বিদ্যুৎবিহীন ও পরিবেশবান্ধব এমনই এসি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশি উদ্ভাবক আশীষ পাল। সেই এসি এখন ছড়িয়ে যাচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামে। বিজ্ঞানমনস্ক আশীষ পাল কাজ করেন সিঙ্গাপুরভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা গ্রে গ্রুপে।
প্রতিষ্ঠানটিতে তিনি ক্রিয়েটিভ সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত। তিনিই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে স্বল্প খরচেএ বিদ্যুৎবিহীন ও পরিবেশবান্ধব এসিউদ্ভাবন করেছেন। তার এই উদ্ভাবনের পর গ্রে গ্রুপ কল্যাণমূলক কাজ হিসেবে গ্রামীণ বাংলার হাজার হাজারমানুষকে এই যন্ত্র তৈরি শেখানোর প্রকল্প হাতে নিয়েছে। গ্রে গ্রুপেরপ্রশিক্ষক দল বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের মিলিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ-ইন্টেলের সহায়তায় গ্রামে গ্রামে যাচ্ছে ও গ্রামবাসীদের এই যন্ত্র তৈরির পদ্ধতি শেখাচ্ছে। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইকো কুলার’। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি করা যন্ত্রগুলো বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। গ্রামীণ-ইন্টেল যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আশীষ পাল, ইকো কুলারের উদ্ভাবকগ্রে গ্রুপের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর জাইয়ানুল হক জানান, বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষদের কথা সব সময় ভাবতেন আশীষ পাল। একদিন তিনি শুনতে পান তার মেয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ব্যাখ্যা করছেন, দ্রুত গতিতে গ্যাস চলাচলের ফলে তা শীতল হয়। গ্যাস শীতলহওয়ার এই ব্যাখ্যা তার মনে দাগ কাটে।
বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করলেওআশীষ পালের উদ্ভাবনী মন ছিল। তাছাড়া বিজ্ঞানের প্রতিও ছিল বেশ আসক্তি। এরপর থেকেই তিনি পরীক্ষা শুরু করেন। যখন সফল হলেন আমাদের তা জানালেন। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে পরিবেশ বান্ধব এসি বানানোর কৌশলটি অভিনব এবং খুব সহজ। জাইয়ানুল হক আরওজানান, বন্যাপ্রবণ দেশ হওয়ায় গ্রামের অনেক মানুষই বাড়ি তৈরির জন্য মাটির বদলে ব্যবহার করেন টিন। এই টিনের ঘরবাড়িগুলো গরমের সময় অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি নিজেও এ ধরনের বাড়িতে থেকেছেন। ফলে কী ভয়াবহ কষ্টে টিনের ঘরের মানুষদের দিন কাটাতে হয় তা তিনি জানেন। ফলে তারা গ্রামীণ মানুষদের জন্য ‘ইকো কুলার’ প্রকল্প শুরু করেছেন। গত বছর মার্চ মাসে প্রথম ইকো কুলার তৈরি করা হয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রামে গ্রামে এই যন্ত্র বানানো শেখানো শুরু হয়েছে। এই যন্ত্র চালাতে কোনও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন হয় না। ফলে, এর সাহায্যে সহজেই ঘর শীতল রাখতে পারবেন গ্রামের মানুষ। সংস্থাটি জানায়, এই যন্ত্র দিয়ে ঘরের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত কমিয়ে আনা যায়।
যখন ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা কমে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে আসে তা মানুষকে অনেক স্বস্তি দেয়। যেভাবে তৈরি করা যায় এই কুলার: বাতাস শীতল করার এই যন্ত্রের নির্মাণ কৌশল বিস্ময়কর সাদামাটা। এটি তৈরি করতে হলে কয়েকটি প্লাস্টিকের বোতল মাঝ বরাবর কেটে বোতলগুলোর গলা একটি শক্ত কাগজে আটকে দিতে হবে। বোতলের গলার সরু অংশঘরের দিকে মুখ করে কাগজের বোর্ডটি জানালায় স্থাপন করলেই হয়ে যায় একটি কুলার। কাটা অংশ দিয়ে বাতাস এসে সরুঅংশ দিয়ে বের হওয়ার সময় চাপের ফলে শীতল হয়ে পড়ে। ইকো কুলার তৈরি শেখানো হচ্ছে গ্রামের মানুষকেএই কুলারের কর্মকৌশলটির সহজ ব্যাখ্যা হচ্ছে, আমরা মুখ হা করে যদি জোরে শ্বাস ছাড়ি তাহলে গরম বাতাস বের হয়েআসে। কিন্তু ঠোঁট সরু করে শ্বাস ছাড়লে তা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। এ প্রক্রিয়াতেই ঘরের বাতাস শীতল করে ‘ইকো কুলার’। সংস্থাটির আশা, বাংলাদেশে প্লাস্টিকের বোতল খুব সহজলভ্য হওয়ার কারণে এই ইকো কুলার তৈরি একেবারে সহজ। এর মধ্য দিয়ে গ্রামের মানুষরা প্রচণ্ড গরমে কিছুস্বস্তি পাবেন-
বাংলাদেশি উদ্ভাবকের বিদ্যুৎবিহীন এসি (ভিডিওসহ)
4/
5
Oleh
Check This Out